লক্ষ্মীপুর প্রতিনিধি:
অপহৃত শিশু মিনহাজ
রাতে নিজ ঘরে দেড় বছর বয়সী শিশু মিনহাজকে নিয়ে ঘুমিয়ে পড়েন তার বাবা-মা। মধ্যরাতে জেগে দেখেন তাদের একমাত্র শিশু সন্তানটি বিছানায় নেই। ঘরের দরজা ছিল খোলা, মিনহাজের মায়ের মুঠোফোনটিও খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না। এরপর শুরু হয় মিনহাজকে খোঁজাখুজি। না পেয়ে থানা পুলিশের শরাণাপন্ন হন ভুক্তভোগী পরিবার।
ভোর রাতে মিনহাজের মায়ের ফোনে অন্য নম্বর থেকে কল করলে ওপ্রান্ত থেকে ধরেন একজন পুরুষ। শিশুটিকে ছাড়িয়ে নিতে ৫ লাখ টাকা দাবি করেন তিনি।
ঘটনাটি লক্ষ্মীপুর সদর উপজেলার লাহারকান্দি গ্রামের। রবিবার মধ্য রাত থেকে সোমবার ৫টার মধ্যে এই অপহরণের ঘটনা ঘটে।
ভুক্তভোগী ওই পরিবারের কর্তা হলেন সৌদি প্রবাস ফেরত মামুন হোসেন, তার স্ত্রী কহিনুর বেগম।
জানা গেছে, স্থানীয় এলাহী বক্স বাড়ির নিজ ঘরে প্রতিদিনের মতো শিশু মিনহাজকে নিয়ে প্রবাস ফেরত মামুন ও তার স্ত্রী কহিনুর ঘরের দরজা বন্ধ করে ঘুমিয়ে পড়েন। রাত আড়াইটার দিকে মিনহাজের মায়ের ঘুম ভাঙে। ঘরের বাতি জ্বালিয়ে তিনি দেখতে পান দরজা খোলা। এসময় তার স্বামীকে ডেকে ঘুম ভাঙান। পরে দেখেন তাদের পাশে থাকা শিশু সন্তান বিছানায় নেই। শিশু মিনহাজের মায়ের মুঠোফোনটিও নেই। শুরু হয় চিৎকার কান্নাকাটি। আশেপাশের মানুষ ছুটে আসে ওই বাড়িতে। রাতে সবাই মিলে শিশুটিকে খুঁজছিলেন তখন। না পেয়ে রাত ৩টার দিকে থানায় যান বাবা। থানার কর্তব্যরত ডিউটি অফিসার বলেন, সকাল ৮টায় পুলিশ পাঠানো হবে। এরপর হতাশা নিয়ে বাড়িতে ফিরেন ভুক্তভোগী বাবা।
ভোর ৫টার দিকে শিশু মিনহাজের মা কহিনুরের খোঁয়া যাওয়া ওই মুঠোফোনে প্রতিবেশী একজনের নাম্বার থেকে কল করা হয়।
তখন শিশুটিকে ছেড়ে দিতে ৫ লাখ টাকা মুক্তিপণ দাবি করে দুর্বৃত্তরা। এরপর ভেঙে পড়েন শিশুর বাবা মামুন। সকাল ৮টার দিকে প্রথমে ঘটনাস্থলে ছুটে যান সদর থানার এসআই জাহাঙ্গীর, এরপর সদর থানার ওসি আজিজুর রহমান মিয়া, পর্যায়ক্রমে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (সদর সার্কেল) আনোয়ার হোসেন ও পুলিশ সুপার ড. এ এইচ কামরুজ্জামান।
পুলিশের উপস্থিতির খবর পেয়ে সকাল ১০ টার দিকে শত শত উৎসুক জনতা ভিড় জমান ওই বাড়িতে। কিন্তু কেউ খুঁজে পায়নি শিশুটিকে। এসময় শিশুটির মা ও স্বজনদের আহাজারি করতে দেখা যায়।
জানতে চাইলে মিনহাজাহের মা কহিনুর বেগম বলেন, রাতে আমরা সবাই ঘুমিয়ে পড়ি। আনুমানিক ২টার দিকে আমার ঘুম ভাঙে। তখন আমি উঠে বাতি জ্বালিয়ে দেখি ঘরের দরজা খোলা। প্রথমে মনে হয় আমার স্বামী বাইরে গেছেন হয়তো। কিন্তু পরবর্তীতে তাকে বিছানায় দেখে তার ঘুম ভাঙাই। এসময় মিনহাজকে বিছানায় না দেখে খোঁজাখুজি শুরু হয়। আমার মুঠোফোনটিও খুঁজে পাইনি। তখন আমাদের চিৎকারে আশেপাশের লোকজন জড়ো হয়। ভোর রাতে আমার ফোনে কল দিলে পুরুষ কণ্ঠে ৫ লাখ টাকা মুক্তিপণ দাবি করে অপর প্রান্ত থেকে।
মিনহাজের বাবা মামুন হোসেন বলেন, রাতে যখন থানায় গেছি তখন যদি পুলিশ আসতো তাহলে হয়তো ছেলেটিকে সহজেই পেতাম। এখন ছেলেটিকে ফিরে পাবো কি না তা বলতে পারছি না। আমি সরকারের কাছে এর সুবিচার চাই, আমার সন্তানকে ফিরে পেতে চাই।
এ ব্যাপারে পুলিশ সুপার ড. এ এইচ এম কামরুজ্জামান জানান, দরজা খুলে ভেতরে প্রবেশের বিষয়টি দেখে মনে হচ্ছে তাদের জানা শোনা লোকজনই এ ঘটনায় জড়িত রয়েছে। শিশুটিকে উদ্ধারের চেষ্টাসহ ঘটনার তদন্ত চলছে।
বিডি প্রতিদিন/কালাম
Leave a Reply