নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রতীকী ছবি
যৌতুকের ২০ লাখ টাকা না দেয়ায় স্ত্রীর গলা টিপে ধরলেন শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি বিভাগের এক শিক্ষক। অভিযুক্ত শিক্ষকের নাম মো. মিজানুর রহমান।
বারবার সমঝোতার চেষ্টা করে ব্যর্থ স্ত্রী লিমানা নাজনীন অবশেষে থানার আশ্রয় নেন। শুক্রবার ঢাকার রমনা মডেল থানায় স্বামীর বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করেছেন তিনি।
২০১৭ সালের ৫ মে পারিবারিকভাবে বিয়ে হয়েছিল মিজানুর রহমান এবং লিমানা নাজনীনের। বিয়ের পর লিমানা জানতে পারেন, এর আগে অন্য মেয়ের সঙ্গে মিজানুরের সম্পর্ক ছিল। এরই মধ্যে এই দম্পত্তির সংসারে আসে একটি মেয়ে সন্তান। সংসারের স্বার্থে এসবকে পাত্তা দেননি প্রথমে। কিন্তু মিজানুর ও তার পরিবারের সদস্যরা শুরু করেন অত্যাচার। লিমানাকে তিনি চাপ দেন বাবার কাছ থেকে টাকা এনে একটি বাড়ি কিনে দিতে। এতে লিমানা অস্বীকার করলে শুরু হয় নির্যাতন। সেই সঙ্গে মিজানুর তালাকের হুমকিও দিয়ে বলেন, বাড়ি কিনে না দিলে মোটা অংকের যৌতুক নিয়ে অন্য মেয়েকে বিয়ে করব।
মিজানুর এবং তার পরিবারের সদস্যদের অত্যাচার সহ্য করতে না পেরে বছর খানেক আগে মেয়েকে নিয়ে বাবার বাড়ি চলে আসেন লিমানা। এখন পর্যন্ত তিনি বাবার বাড়িতেই অবস্থান করছেন। তবে এত সময়ের মধ্যে মিজানুর তার কিংবা তার মেয়ের কোনো খোঁজ-খবর নেননি; ভরণ-পোষণের কোনোরকম খরচ প্রদান করেননি। এ নিয়ে লিমানা আইন ও সালিশ কেন্দ্রেও একটি অভিযোগ দেন। আইন ও সালিশ কেন্দ্র মিজানুরকে ডাকলেও তিনি সাড়া দেননি।
এর আগে গত সেপ্টেম্বর মাসে চিকিৎসাজনিত প্রয়োজনে ঢাকায় আসেন মিজানুর। তখন খাবার নিয়ে হাসপাতালে গিয়ে সমঝোতার চেষ্টা করেন লিমানা। কিন্তু তার স্বামী-শাশুড়ি তাকে অপমান করে এবং মারধর করে তাড়িয়ে দেয়। এরপর গত ২৩ এপ্রিল মিজানুর লিমানাদের মগবাজারের বাসায় এসে বাড়ি কেনার জন্য ২০ লক্ষ টাকা দাবি করে। সেই টাকা দিতে অস্বীকার করলে লিমানাকে গলা চেপে ধরে মিজানুর। এক পর্যায়ে লিমানার চিৎকারে বাবা-মা ছুটে আসলে মিজানুর তাকে কিল-ঘুষি মেরে পালিয়ে যায়।
সমস্যা সমাধানে তখনো চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছিলেন লিমানা। তিনি গত ১৪ জুলাই মিজানুরের কর্মক্ষেত্র শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্টার বরাবর একটি অভিযোগ দাখিল করেন। শাবিপ্রবির প্রশাসন মিজানুরকে আলোচনায় বসার কথা বললেও তাতে তিনি কর্ণপাত করেননি। সবশেষে বাধ্য হয়ে শুক্রবার রমনা থানায় মামলাটি দায়ের করেন লিমানা। মামলা দায়েরের সময় পুলিশও একাধিকবার মোবাইল ফোনে মিজানুরের সঙ্গে যোগাযোগ করতে ব্যর্থ হয়।
এদিকে লিমানা জানতে পেরেছেন, তার স্বামী মিজানুর দ্রুতই আমেরিকা চলে যাচ্ছেন। তিনি বলেন, মাসের পর মাস দ্বারে দ্বারে গিয়ে কড়া নেড়েছি; বাবাকে মেয়ের কাছে ফিরিয়ে আনতে। কিন্তু সে (মিজানুর) আসেনি। মিজানুরের কর্মস্থলেও অভিযোগ করেছি। এরপর শুনেছি শাবিপ্রবির শিক্ষকরাও তাকে বুঝিয়েছেন। কিন্তু কাজ হয়নি। আইন শালিস কেন্দ্র থেকে তাকে ডাকলেও সে যায়নি। এখন শুনছি সে নাকি আমেরিকা চলে যাচ্ছে। তাই মামলা করতে বাধ্য হয়েছি।
লিমানা আরো বলেন, বিয়ের পর আমার পড়াশোনা বন্ধ করে দিয়েছিল। আমাকে মাস্টার্স কমপ্লিট করতেও দেয়নি। এর মাঝেই আমি গর্ভবতী হয়ে পড়ি। সে যৌতুকের জন্য দিনের পর দিন আমাকে নির্যাতন করলেও আমি বাচ্চার ভবিষ্যতের কথা ভেবে এতদিন সব সহ্য করেছি। এখন আর পারছি না। শুনছি সে এখন অন্য নারীর সঙ্গে পরকীয়ায় জড়িত। আমাদের কোনো খোঁজ-খবর রাখে না। আমি এর সমাধান চাই।
Leave a Reply