আন্তর্জাতিক ডেস্ক:
মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যের উত্তরাঞ্চলীয় দুর্গম মিনবায়া ও মারুক এলাকায় সশস্ত্র আরাকান আর্মির অবস্থান লক্ষ্য করে হামলা চালিয়েছে দেশটির সেনা সদস্যরা। গত বৃহস্পতি ও পরদিন শুক্রবার (২২ ও ২৩ আগস্ট) টানা দুই দিন যাবত দুটি সামরিক হেলিকপ্টার ও গোলন্দাজ বাহিনীর সদস্যদের দারা হামলাটি চালানো হয়। হামলার সত্যতা নিশ্চিত করে আরাকান আর্মির পক্ষ থেকে জানান হয়, এসব হামলার পাল্টা জবাব হিসেবে মিয়ানমারের অন্তত অর্ধশতাধিক সেনাকে হত্যা করা হয়। যদিও এতে আরাকান আর্মিরও তিন সদস্য প্রাণ হারিয়েছেন। তাছাড়া এবারের সংঘর্ষে উভয় পক্ষের বেশ কিছু সদস্য আহত হয়েছে। এ দিকে দেশটির গণমাধ্যম ‘দ্য ইরাবতি’ এক প্রতিবেদনে জানায়, আরাকান আর্মির করা এই দাবির সত্যতা এখনো স্বাধীনভাবে যাচাই করা সম্ভব হয়নি। কেননা প্রকৃত হতাহতের সংখ্যা প্রকাশ করতে এরই মধ্যে অস্বীকার করেছে সেনা সদস্যরা। তাছাড়া দুই পক্ষের সশস্ত্র এই লড়াইয়ের কারণে জীবন বাঁচাতে নিরাপদ স্থানের সন্ধানে অন্তত তিনটি গ্রামের বাসিন্দারা নিজেদের বাড়ি ছেড়ে পালিয়েছে। বিশ্লেষকদের মতে, জাতিগত সংঘাত ও দারিদ্র্য-জর্জরিত এই রাখাইনে কেবল রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর লোকজনই একমাত্র নিপীড়িতদের মধ্যে নয়। অঞ্চলটির বৌদ্ধরাসহ (আরাকান জাতিভুক্ত) সেখানকার বিভিন্ন জাতিগোষ্ঠী দীর্ঘদিন যাবত সেনাপ্রাধান্যশীল কেন্দ্রীয় সরকারের নিপীড়নের শিকার হচ্ছে। যে কারণে কেবল রোহিঙ্গাদের ছাড়া বাদবাকি সকল জনগোষ্ঠীর স্বীকৃতির প্রশ্নকে সামনে রেখেই নিজেদের কর্মকাণ্ড পরিচালনা করছে বিদ্রোহী আরাকান আর্মি। যার অংশ হিসেবে আত্মনিয়ন্ত্রণের অধিকার প্রতিষ্ঠার পক্ষে এই সরব ভূমিকা বিশেষত রাখাইন অঞ্চলের বৌদ্ধদের মধ্যে তাদের গ্রহণযোগ্যতার ভিত্তি তৈরি করেছে। শুক্রবার রাখাইনের পার্লামেন্টে আরাকান ন্যাশনাল পার্টির মিনবায়া অঞ্চলের আইন প্রণেতা উ হ্লা থেইন অং বলেছেন, ‘গত বৃহস্পতিবার দিনভর সেনাবাহিনী ও আরাকান আর্মির মধ্যে একটি সশস্ত্র লড়াই সংগঠিত হয়েছে। যেখানে সেনাবাহিনীর দুই থেকে তিনটি হেলিকপ্টার থেকে ক্ষেপণাস্ত্র ও গোলাবর্ষণ করা হয়। এবার মিনবায়ার পান মিয়াং মডেল গ্রাম থেকে প্রায় ৩ মাইল উত্তরপূর্বাঞ্চলে এই যুদ্ধটি সংগঠিত হয়।’ অপর দিকে রাখাইনের নৃতাত্ত্বিক কংগ্রেসের সেক্রেটারি কো জাউ জাউ বলেছিলেন, ‘সেনা সদস্যদের বিমান হামলার কারণে সুয়ে কিয়ান, দাই থা এবং কিয়াং টং গ্রামের মতো আশেপাশের বেশ কিছু গ্রাম থেকে বাসিন্দারা নিরাপদ স্থানে সরে গিয়েছেন।’ যদিও আরাকান আর্মির পক্ষ থেকে এক বিবৃতিতে জানান হয়, গত বৃহস্পতিবার সকাল ১০টা নাগাদ মিয়ানমার সেনাবাহিনীর দুই শতাধিক পদাতিক সেনা বাহিনীর নিয়ন্ত্রিত দাই থা গ্রামের দিকে অগ্রসর হয়। মূলত এতেই দুই পক্ষের মধ্যে যুদ্ধ শুরু হয়। যা সন্ধ্যা সাতটা পর্যন্ত সেই গ্রামের দক্ষিণপূর্ব এলাকায় যুদ্ধ চলে বলে সশস্ত্র গোষ্ঠীটি তাদের বিবৃতিতে জানায়।
Leave a Reply