যুগ-যুগান্তর ডেস্ক :
চলতি বছর ডেঙ্গু মোকাবিলায় নানা পদক্ষেপ নেয় স্থানীয় সরকার বিভাগ। এসব পদক্ষেপের কারণে এরই মধ্যে দেশে ডেঙ্গু রোগীর সংখ্যা কমেছে। এর ফলে ডেঙ্গু নিয়ে মানুষের মধ্যে যে আতঙ্ক ছড়িয়েছিল, তাও কমতে শুরু করেছে। জানা গেছে, বাংলাদেশে ২০০০ সালে প্রথমবারের মত ডেঙ্গু রোগের দেখা মেলে। এরপর ২০১৮ সাল পর্যন্ত এ রোগে আক্রান্ত হন ৫০ হাজার ১৪৮ জন। তবে চলতি বছরই এডিস মশাবাহিত এ রোগটি সবচেয়ে বেশি আতঙ্ক ছড়িয়েছে। ডেঙ্গুতে আক্রান্তের সংখ্যা এরই মধ্যে ৬০ হাজার ছাড়িয়েছে।
এদিকে ডেঙ্গু মোকাবিলায় সিটি কর্পোরেশন ও পৌরসভাগুলোকে মোট সাড়ে ৫১ কোটি টাকা বিশেষ বরাদ্দ দেয় স্থানীয় সরকার বিভাগ। এর মধ্যে ঢাকার দুই সিটি কর্পোরেশনকে সাড়ে ৭ কোটি করে ১৫ কোটি টাকা বরাদ্দ দেয়া হয়। এছাড়া গাজীপুর, নারায়ণগঞ্জ ও চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনকে ১ কোটি টাকা করে বরাদ্ধ দেয়া হয়। দেশের অন্যান্য সিটি কর্পোরেশনের প্রত্যেকটিতে ৫০ লাখ এবং সব পৌরসভাগুলোকে ৩০ কোটি টাকা বরাদ্দ দেয়া হয়।অন্যদিকে ডেঙ্গু রোগ থেকে নাগরিকদের রক্ষায় স্থানীয় সরকার বিভাগের সব কর্মকর্তা ও কর্মচারীর ছুটি বাতিল করা হয়। স্থানীয় সরকার বিভাগের এক অফিস আদেশের মাধ্যমে এ ছুটি বাতিল করা হয়।
এতে বলা হয়, ডেঙ্গু রোগের প্রাদুর্ভাব রোধে জনসচেতনতা সৃষ্টি, মশার প্রজননস্থল বিনষ্টকরণ, পরিচ্ছন্নতা অভিযান পরিচালনা এবং লার্ভা ও মশক নিধন কার্যক্রমে সরকারের বিভিন্ন মন্ত্রণালয়, বিভাগ, দফতর ও সংস্থা ব্যাপক কর্মসূচি গ্রহণ করেছে। এ কর্মসূচিকে সফল করার লক্ষ্যে পুনরাদেশ না দেয়া পর্যন্ত স্থানীয় সরকার বিভাগের সব কর্মকর্তা ও কর্মচারী এবং ঢাকা দক্ষিণ ও উত্তর সিটি কর্পোরেশনের বিভিন্ন ওয়ার্ডে দায়িত্ব পালনকারী কর্মকর্তাদের সাপ্তাহিক ও সরকারি ছুটি বাতিল করা হলো।
এদিকে ডেঙ্গু জ্বরের প্রাদুর্ভাব বেড়ে যাওয়ায় স্থানীয় সরকার বিভাগের উদ্যোগে ২৫ থেকে ৩১ জুলাই দেশব্যাপী মশক নিধন সপ্তাহ পালন করা হয়। ‘নিজ আঙ্গিনা পরিস্কার রাখি, সবাই মিলে সুস্থ থাকি’ স্লোগান নিয়ে দেশব্যাপী এই সপ্তাহ পালন করা হয়। এ কর্মসূচির মাধ্যমে ডেঙ্গু মশার বিষয়ে দেশের মানুষকে সচেতন করা হয়।এছাড়া ডেঙ্গুর সমস্যা ও প্রতিরোধ নিয়ে গত ৩ আগস্ট কলকাতায় গিয়ে সেখানকার মেয়র ফিরাদ হাকিমের সঙ্গে বৈঠক করেন স্থানীয় সরকার বিভাগের মন্ত্রী মো. তাজুল ইসলাম।
এ বিষয়ে মন্ত্রী বলেন, কলকাতায় এক সময় ডেঙ্গুর প্রাদুর্ভাব ছিল। কীভাবে কলকাতা সেটা মোকাবিলা করল, সে বিষয়ে স্থানীয় সরকার মন্ত্রী হিসেবে আমি এবং আমার প্রতিমন্ত্রী, মন্ত্রণালয়ের সচিব, কলকাতা ডেপুটি হাইকমিশনারসহ অন্যরা দীর্ঘক্ষণ ডেঙ্গু প্রতিরোধের বিষয়ে আলোচনা করেছি। এটা আমাদের সমৃদ্ধ করেছে এবং এতে আরো আন্তরিকতা বেড়েছে।স্থানীয় সরকার বিভাগের এসব উদ্যোগের বাস্তবায়নের ফলে সারাদেশে এরই মধ্যে ডেঙ্গু রোগীর সংখ্যা কমতে শুরু করেছে বলেও জানান মন্ত্রী।
স্বাস্থ্য অধিদফতরের হেলথ ইমার্জেন্সি অপারেশন সেন্টার ও কন্ট্রোল রুমের তথ্য অনুযায়ী, সারাদেশে ডেঙ্গু আক্রান্তের সংখ্যা কমেছে। হাসপাতালগুলোতে রোগী ভর্তিও হচ্ছে কম। সারাদেশে শনিবার পর্যন্ত ২৪ ঘণ্টায় ১ হাজার ১৭৯ জন রোগী হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন। স্বাস্থ্য অধিদফতর আরো জানিয়েছে, এখন পর্যন্ত ৫৪ হাজার ৯৫৬ জন ব্যক্তি সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরেছেন।
এর আগে গেল শুক্রবার পর্যন্ত ২৪ ঘণ্টায় ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হন ১ হাজার ৪৪৬ জন। এ হিসাবে শনিবার নতুন করে ভর্তি হওয়া রোগীর সংখ্যা কমেছে। স্থানীয় সরকার বিভাগের মন্ত্রী মো. তাজুল ইসলাম বলেন, ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণে সরকার ও সব প্রতিষ্ঠান আন্তরিকভাবে কাজ করছে। আশা করি ডেঙ্গু মোকাবিলায় আমরা সফল হব।
Leave a Reply