নিজস্ব প্রতিবেদক
রাজধানী ঢাকায় ক্যাসিনো বাণিজ্যে জড়িত থাকার অভিযোগে একে একে বেরিয়ে আসছে যুবলীগ, আওয়ামী লীগের প্রভাবশালী সব নেতারা। এরই মধ্যে গ্রেফতার হয়েছেন কেউ। আবার আলোচনা সমালোচনায় আছেন আরও অনেক প্রভাবশালীরা। তবে কেউ কেউ গ্রেফতার আতঙ্কে আগেই দেশ ছেড়ে পলাতক আছেন। গত ১৮ সেপ্টেম্বর গুলশান থেকে ইয়ংমেনস ক্যাসিনো ক্লাবের মালিক ঢাকা দক্ষিণ যুবলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক খালেদ মাহমুদ ভূঁইয়াকে এবং এরপর ২০ সেপ্টেম্বর যুবলীগ নেতা জিকে শামীমকে গ্রেফতার করে র্যাব। এরা দুইজনই এখন আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর রিমান্ডে রয়েছেন। এদিকে মঙ্গলবার (২৪ সেপ্টেম্বর) ঢাকা দক্ষিণের গেন্ডারিয়া থানার সভাপতি এনামুল হক এনু ও যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক রূপন ভূঁইয়ার বাসায় অভিযান চালিয়েছে র্যাব। তাদের বাসায় অভিযানে ক্যাসিনোর লাভের বিপুল পরিমাণ টাকা ও স্বর্ণ জব্দ করা হয়েছে।
র্যাব সূত্রে জানা গেছে, রাজধানীর ওয়ান্ডারার্স ক্লাবের ক্যাসিনো ব্যবসার হোল্ডার গেন্ডারিয়ার আওয়ামী লীগের সভাপতি এনামুল হক ও যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক রূপন ভূঁইয়া। তবে এই দুজনই বর্তমানে পলাতক।
র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র্যাব) ৩-এর অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল শাফিউল্লাহ বুলবুল সাংবাদিকদের বলেন, ‘এনামুল হক ওরফে এনু ওয়ান্ডারার্স ক্লাবের ক্যাসিনো ব্যবসার অংশীদার। আর তার ভাই রূপন ভূঁইয়া মানি লন্ডারিংয়ের সঙ্গে জড়িত। আমাদের কাছে গোয়েন্দা তথ্য ছিল যে ক্যাসিনোর অবৈধ টাকা রাখার জন্য তারা পাঁচটি ভোল্ট ভাড়া নিয়েছেন। এমন তথ্যের ভিত্তিতে সোমবার দিনগত রাত থেকে দুপুর পর্যন্ত আমরা এখানে অভিযান পরিচালনা করি।
তিনি বলেন, ‘বাড়িটির দ্বিতীয় ও তৃতীয় তলায় অভিযান চালিয়ে আমরা তিনটি ভোল্ট পেয়েছি। পরে ম্যাজিস্ট্রেট এনে ভোল্টগুলো খুলেছি। তিনটি ভোল্টে এক কোটি পাঁচ লাখ টাকা এবং ৭৩০ ভরি স্বর্ণ পাওয়া যায়। এ স্বর্ণের দাম চার কোটি টাকা। অভিযানে আমরা পাঁচটি অস্ত্র উদ্ধার করেছি। বাকি দুটি ভোল্টের একটির সন্ধান নারিন্দার এক বাড়িতে পেয়েছি।’
তিনি আরও বলেন, ‘এনামুল ক্যাসিনোর অবৈধ টাকা ভোল্টে রাখতেন। তবে টাকা ভোল্টের ভেতরে বেশি জায়গা নেয় বলে তিনি টাকাকে স্বর্ণে কনভার্ট করে ফেলতেন। এছাড়া রাজধানীর বিভিন্ন জায়গায় এনামুলের ১৫টি বাড়ি আছে। তারা অস্ত্র দিয়ে স্থানীয় বাসিন্দাদের ভয় দেখিয়ে নানা অপরাধমূলক কর্মকাণ্ড চালাতেন। এ বাড়ির লোকজনকে জিজ্ঞাসাবাদ করে জানতে পেরেছি, এনামুল ১৫ দিন আগে থাইল্যান্ডে পালিয়ে গেছেন।’
ঢাকা দক্ষিণ সিটির অধিনস্ত এলাকায় আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর অভিযানে এরই মধ্যে পাওয়া গেছে অনেকগুলো ক্যাসিনোর সন্ধ্যান। এরমধ্যে গুলিস্থানের মুক্তিযোদ্ধা সংসদ ক্রীড়া চক্র, মতিঝিলে আরামবাগ স্পোর্টিং ক্লাব, মোহামেডান স্পোর্টিং ক্লাব, ইয়ংমেনস ক্লাব, ভিক্টোরিয়া ক্লাব, দিলকুশা ক্লাব।
এসব ক্লাবগুলো কারা নিয়ন্ত্রণ করতেন এ সম্পর্কে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ সূত্রে জানা যায়, দুই শিফটে পরিচালিত হওয়া এই ক্লাবগুলো রাজনৈতিক ব্যক্তিদের দ্বারাই নিয়ন্ত্রিত হতো। যাদের মধ্যে রয়েছেন অনেক প্রভাবশালী নেতারা।
জানা যায়, ঢাকা ওয়ান্ডারার্স ক্লাব নিয়ন্ত্রণ করে স্থানীয় স্বেচ্ছাসেবক লীগের সভাপতি মো. আবু কাউছার। আরামবাগ স্পোর্টিং ক্লাব নিয়ন্ত্রণ করে ৯ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর মো. মোমিনুল হক সাঈদ। মোহামেডান স্পোটিং ক্লাব ও দিলকুশা স্পোর্টিং ক্লাবও নিয়ন্ত্রিত করেন এই কাউন্সিলর। এছাড়া ভিক্টোরিয়া ক্লাবটি ঢাকা মহানগর দক্ষিণ যুবলীগের শীর্ষ এক নেতার দ্বারা নিয়ন্ত্রিত হতো।
এছাড়া ইয়ংমেনস ক্লাবটি নিয়ন্ত্রণ করতেন গ্রেফতার যুবলীগের বহিষ্কৃত নেতা খালেদ মাহমুদ। আর মুক্তিযোদ্ধা সংসদ ক্রীড়া চক্রের নিয়ন্ত্রণে রয়েছেন ঢাকা মহানগর দক্ষিণ যুবলীগ ও আওয়ামী লীগের শীর্ষ পর্যায়ের নেতা।
ক্যাসিনো বাণিজ্য ও জড়িত নেতাদের সম্পর্কে ঢাকা মহানগর দক্ষিণ আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক শাহে আলম মুরাদ দৈনিক অধিকারকে জানান, ক্যাসিনো বাণিজ্য সম্পর্কে আমি জেনেছি। আইনশৃঙ্খলা বাহিনী তাদের দায়িত্ব সঠিকভাবে পালন করছে। এখন দলের যেই হোক তাতে আমাদের কিছু করার নেই।
ঢাকা দক্ষিণে দীর্ঘদিন ধরেই এই ক্যাসিনো বাণিজ্য হচ্ছে, এ সম্পর্কে কি আপনি জানতেন না এমন প্রশ্নের জবাবে মুরাদ বলেন, এ বিষয় সম্পর্কে আমি অবগত নই।
সাংগঠনিকভাবে এদের বিরুদ্ধে দল থেকে ব্যবস্থা নেওয়া হবে কিনা এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘এ অবৈধ ব্যবসার সাথে যেই জড়িত থাকুক না কেন, প্রমাণ পেলে অবশ্যই ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’
Leave a Reply