বান্দরবান সংবাদদাতা :
বান্দরবান সদরের পর্যটন এলাকা হিসেবে পরিচিত মিলনছড়িতে আদিবাসী পল্লি দখল করে গড়ে ওঠা বিলাসবহুল ‘সিলভান ওয়াই রিসোর্ট অ্যান্ড স্পা’তে কোটি কোটি টাকা বিনিয়োগ করেছেন আলোচিত যুবলীগ নেতা এস এম গোলাম কিবরিয়া শামীম ওরফে জি কে শামীম।রিসোর্টটির মালিকানায় যে আটজন আছেন তাদের মধ্যে অন্যতম জি কে শামীম। এখানে প্রায় ২০০ কোটি টাকা বিনিয়োগের লক্ষ্য নির্ধারণ করা হয়েছে।
অনুসন্ধানে জানা গেছে, রিসোর্ট কর্তৃপক্ষ এখানে কমপক্ষে ১০০ একর জমি জবরদখল করেছে। প্রশাসনকে নিজেদের স্বার্থে ব্যবহারের জন্য পুলিশ ফাঁড়ির জন্য জমি দান করে সেখানে পাকা ভবনও করে দেয়া হচ্ছে। দ্বিতল ভবন নির্মাণের কাজ অনেক এগিয়েছে। শিগগিরই এই ভবনে পুলিশ ফাঁড়ি স্থানান্তর করার কথা রয়েছে।পার্বত্য চট্টগ্রাম বন ও ভূমি অধিকার সংরক্ষণ আন্দোলনের বান্দরবান শাখার সভাপতি জোয়াম লিয়ান আমলাই বলেন, প্রশাসনের সহযোগিতায় আদিবাসীদের ভূমি জি কে শামীমসহ অন্যরা দখল করেছেন। আমরা এ ভূমি দখলমুক্ত করতে চাই।রিসোর্টটির সভার রেজুলেশন কপির তথ্য অনুযায়ী, ২০১৮ সালের ৫ এপ্রিল জেলা সদরে রিসোর্ট কর্তৃপক্ষের বোর্ড মিটিং হয়। এতে দেখা যায়, জসিম উদ্দিন মন্টু চেয়ারম্যান, ফজলুল করিম চৌধুরী (স্বপন) ব্যবস্থাপনা পরিচালক, গোলাম কিবরিয়া শামীম (জি কে শামীম) ও শামিল উদ্দিন শুভ উপ-ব্যবস্থাপনা পরিচালক। পরিচালক হিসেবে আছেন এস এইছ এম মহসিন, উম্মে হাবিবা নাসিমা আক্তার, জিয়া উদ্দিন আবির এবং জাওয়াদ উদ্দিন আরবাব।
জি কে শামীমের ঘনিষ্ঠ বলে পরিচিত চট্টগ্রাম-১৪ আসনের সংসদ সদস্য নজরুল ইসলাম চৌধুরীর ছোট ভাই ব্যবসায়ী জসিম উদ্দিন মন্টু এ রিসোর্টের মূল উদ্যোক্তা। তিনি জিকে শামীমের শেয়ারের কথা স্বীকার করে জানিয়েছেন, প্রথম পর্যায়ে প্রায় ২ কোটি টাকা বিনিয়োগ করেছেন রিসোর্টটিতে। তবে পাঁচ তারকা মানের রিসোর্টটিতে বিনিয়োগ দাঁড়াবে ২০০ কোটি টাকা।জানা যায়, গত ২৩ আগস্ট রিসোর্টটির রাইড এমিউজমেন্ট পার্ক, ওয়াচ টাওয়ার, ওয়াটার রাইড ও গেম জোন স্থাপনের জন্য জায়গা পরিদর্শন করে চীন, ভারত ও বুয়েটের পরামর্শক দল। সিঙ্গাপুর, থাইল্যান্ড, ব্যাংককের প্রকৌশলীরা রিসোর্টের ডিজাইন করছেন। মূল কাজের দায়িত্বে আছে বুয়েট। রিসোর্ট নির্মাণের কাজ চলছে। পাঁচ তারকা মানের রিসোর্টটি তৈরি হলে ২৫০ জন পর্যটকের আবাসন হবে এখানে। পাঁচ থেকে ছয়টি আধুনিক মানের রেস্তোরাঁ থাকবে এর ভিতরে। নির্মাণ করা হবে আধুনিক সুইমিং পুল। থাকবে জিম ক্লাব, ছয়টি গ্লফ ক্লাব। ২০২২ সালের ১ জানুয়ারি এ রিসোর্ট উদ্বোধন করার কথা আছে।বান্দরবানে প্রশাসনের সহযোগিতায় বহিরাগতরা জমিজমা বেদখল করে আদিবাসীদেরকে গ্রাম থেকে উচ্ছেদ করছে, এ অভিযোগ করে গত ১১ সেপ্টেম্বর যৌথ বিবৃতি দেন পাহাড়িদের রাজনৈতিক দল ইউপিডিএফের চার সহযোগী সংগঠনের সভাপতি।অন্যদিকে, স্থানীয় পাহাড়িদের জায়গা দখলের যে অভিযোগ আনা হয়েছে, এটি ভিত্তিহীন উল্লেখ করে জসিম উদ্দিন মন্টু জানিয়েছেন, সরকারি নিয়ম মেনে পাহাড়ি সম্প্রদায়সহ বিভিন্ন জনের কাছ থেকে জায়গাগুলো কেনা হয়েছে।এ ব্যাপারে ন্দরবানের বোমাং রাজা উ চ প্রু চৌধুরীর সহকারী অং ঝায় খ্যায়াং বলেন, পার্বত্য শান্তি চুক্তির বিধান অনুসারে বান্দরবানের স্থায়ী বাসিন্দা না হলে কেউ এখানে ভূমি কিনতে পারেন না।এদিকে, স্থানীয় প্রশাসনের সহযোগিতায় আদিবাসীদের ভূমি দখল করে জি কে শামীমের অর্থে গড়ে ওঠা আলিশান রিসোর্টটির কার্যক্রম দ্রুত বন্ধ করার দাবি জানিয়েছে আদিবাসীসহ স্থানীয়রা।রিসোর্টটির বিরুদ্ধে জায়গা দখলের অভিযোগের বিষয়ে বান্দরবানের জেলা প্রশাসক দাউদুল ইসলাম স্থানীয় সাংবাদিকদের জানান, অভিযোগ পাওয়ার পরই তদন্ত কমিটি করা হয়েছে এবং তদন্তের পরই প্রশাসন সিদ্ধান্ত নেবে।প্রসঙ্গত, গত শুক্রবার রাজধানীর নিকেতনে নিজ কার্যালয় থেকে জি কে শামীমকে বিপুল পরিমাণ নগদ অর্থ, এফডিআর, মদ, অস্ত্র এবং ছয় দেহরক্ষীসহ গ্রেপ্তার করে র্যাব।
Leave a Reply