ইংল্যান্ড বিশ্বকাপের ৯ম ম্যাচে টুর্নামেন্টের অন্যতম ফেভারিট নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে মাঠে নামে বাংলাদেশ। দুই দলই এক জয় নিয়ে বিশ্বকাপ শুরু করে এবার লড়াই করে বাংলাদেশের কাছ থেকে দ্বিতীয় জয় ছিনিয়ে নিল নিউজিল্যান্ড। ২ উইকেটের জয় নিয়ে মাঠ ছাড়ে কিউইরা।
বুধবার লন্ডনের ওভালে টস হেরে আগে ব্যাট করতে নেমে মাত্র ২৪৪ রানেই সব উইকেট হারিয়ে থেমে যায় বাংলাদেশের ইনিংস। কিউইদের দিকে ২৪৫ রানের লক্ষ্য ছুঁড়ে দেয় টাইগাররা। জবাবে ব্যাট করতে নেমে ৮ উইকেট হারিয়ে ১৭ বল বাকি থাকতেই জয়ের দেখা পেয়ে যায় নিউজিল্যান্ড।
শুরুতেই ব্যাটে আসেন টাইগার ওপেনার তামিম ইকবাল ও আগের ম্যাচের সতীর্থ সৌম্য সরকার। বাউন্ডারি দিয়ে টাইগারদের রানের খাতা খুললো তামিম ইকবাল। আগের ম্যাচের মতন ধরে এবং দেখে খেলছিলেন টাইগার ওপেনিং জুটি। কিন্তু আজ সৌম্যর কপাল টা খারাপই ছিল বলা চলে। দলীয় অর্ধশতের কাছে গিয়ে ঘরে ফিরতে হলো তাঁকে। ম্যাট হেনরি বলে বোল্ড হলেন এই টাইগার ব্যাটসম্যান।
যদিও দলকে ২৫ রান উপহার দিয়েছেন ফেরার আগে। এরপর ক্রিজে আসেন সহ-অধিনায়ক সাকিব আল হাসান। এসেই তামিমের সঙ্গী হন। টাইগাররা পার করে দলীয় অর্ধশত। এরপর ঠিক টাইগারদের বিশ্বকাপের প্রথম ম্যাচের মত সৌম্য আউট হওয়া আর দলীয় অর্ধশতের পরে তামিমের ফেরা। লকি ফার্গুসনের বলে এক বাজে শর্ট করেন তামিম ইকবাল। আর তা একদম হাতে গিয়ে পড়ে ট্রেন্ট বোল্টের হাতে। কোন কষ্ট ছাড়াই তামিমকে ফেরালেন কিউইরা। ৩৮ বলে ২৫ রানের এক ইনিংস খেলেন তামিম। এ যেন দক্ষিণা আফ্রিকার বিপক্ষে টাইগারদের ম্যাচের পুনরাবৃত্তি। আবারও দলের হাল ধরলেন সাকিব-মুশফিক। তুলে নিলেন দলীয় শতক। এরপরেই কপাল পুড়ে মুশফিকের। মিচেল স্যান্টনারের বলে শট করে সাকিবের কলে দৌড় দেন মুশি। কিন্তু সাকিব নিজের জায়গায় দাঁড়িয়ে থাকেন।
গাপটিলের কাছে যাওয়া বল ছুড়ে দেন লাথামের কাছে। মুশফিক ব্যাক করে ক্রিজে ঢুকতে ঢুকতে লাথাম উইকেট ভেঙে দেয়। সাকিবের ভুলে ফিরতে হলো মুশফিককে। এরপরপরই সাকিব তুলে নিলেন একদিনের আন্তর্জাতিক ম্যাচে নিজের ৪৪ তম অর্ধশত। ৫৬ বলে ৫১ রান তুলে নেন টাইগার অলরাউন্ডার। মিচেল স্যান্টনারের বলে ৪ মেরে অর্ধশত পূরণ করে সাকিব। আরো এক ওভার ভালোই খেলেন করেন ৬৪ রান। এরপর আর এগোতে পারেননি এই অলরাউন্ডার। গ্রান্ডহোমের বলে লাথামের কাছে কট আউট হয়ে ফিরতে হয় তাঁকে।
আসা- যাওয়ার মধ্যেই আছে বাংলাদেশের খেলোয়াড়রা। এবার ঘরে ফিরলেন মোহাম্মদ মিঠুন। ম্যাট হেনরির বলে গ্র্যান্ডহোমের হাতে ক্যাঁচ তুলে দেন মিঠুন(২৬)। এরপর ফিরতেই থাকে টাইগাররা। মাহমুদউল্লাহ ২০ রানে, মোসাদ্দেক ১১ রানে প্যাভিলিয়নের পথ ধরেন। মেহেদি হাসান ও মাশরাফী পরপর ফেরেন ক্যাঁচ হয়ে। সাইফউদ্দিন বোল্ড আউট হয়ে ২৪৪ রানে ৪৯.২ ওভারে ইনিংস থামে বাংলাদেশের।
নিউজিল্যান্ডের হয়ে ম্যাট হেনরি ৪টি, ট্রেন্ট বোল্ট ২টি এছাড়া কলিন ডি গ্র্যান্ডহোম, লকি ফার্গুসন ও মিচেল স্যান্টনার ১ টি করে উইকেট নেন।
জবাবে ব্যাট করতে নেমে দলীয় ৩৫ রানে সাকিবের বলে তামিমের কাছে ক্যাঁচ তুলে দেন মার্টিন গাপটিল(২৫)। এবার একই ভাবে ক্যাঁচ বানিয়ে কলিন মুনরোকেও(২৪) ফেরালেন সাকিব। তবে এবার ক্যাঁচটি লুফে নিয়েছে মেহেদি হাসান মিরাজ।
এরপর একটা বড় সুযোগ হারায় বাংলাদেশ। উইকেটকিপার মুশফিকুর রহিমের মারাত্মক এক ভুলে বেঁচে গেলেন কেন উইলিয়ামসন। সাকিব আল হাসানকে মিড অনে খেলে সিঙ্গেলের জন্য ছুটেছিলেন রস টেলর। নন স্ট্রাইক থেকে উইলিয়ামসন ছুটেছিলেন একটু দেরিতে। তামিম ইকবালের থ্রোটা সরাসরি স্টাম্প ভেঙে দিতে পারত। কিন্তু স্টাম্পের সামনে হাত বাড়িয়ে থ্রোটা ধরতে যান মুশফিক। বল ধরে তিনি স্টাম্প ভাঙার আগেই তার গ্লাভস লেগে উঠে যায় বেল। উইলিয়ামসন তখন অনেকটা দূরেই। মুশফিক মাটি থেকে স্টাম্প তুললেও হয়তো আউট হতে পারতেন কিউই অধিনায়ক। কিন্তু মুশফিক করেননি সেটাও! তখন ৮ রানে ব্যাট করছিলেন উইলিয়ামসন।
এরপর আর কিউইদের আটকাতে পারেনই মাশরাফীরা। টেলর ও অধিনায়ক উইলিয়ামসনে জয়ের দিকে এগোচ্ছে কিউইরা। ইতিমোধ্যে টেলর নিজের ক্যারিয়ারের ৪৮ তম অর্ধশত তুলে নিয়েছে। এই জুটিতে দলীয়১৬০ রানের সংগ্রহ গড়ে তোলে। মোসাদ্দেকের কাছে ক্যাঁচ বানিয়ে উইলিয়ামসনকে ফিরিয়ে জুটি ভাঙে মিরাজ। ফেরার আগে ৪০ রানের ইনিংস খেলেন কিউই অধিনায়ক।
একই ওভারে মোসাদ্দেকের কাছে ক্যাঁচ তুলে দেন লাথাম। শূন্য রানে ঘরে ফেরেন এই কিউই ব্যাটসম্যান। রস টেলর একাই দলকে টেনে নিয়ে যাচ্ছিল। সেই টেলরকে থামিয়ে টাইগার শিবিরে স্বস্তি আনলো মোসাদ্দেক। মোসাদ্দেকের লেগ সাইডের বল খেলতে গিয়ে মুশফিকের হাতে কট হন এই কিউই ব্যাটসম্যান। তবে ঘরে ফেরার আগে ৮২ রান করে জয়ের আশা জ্বালিয়ে গেছেন টেলর।
এরপর সাইফউদ্দিনের বলে পিছন থেকে মারতে যান কলিন ডি গ্র্যান্ডহোম। মুশফিকুর রহিম লাফিয়ে উঠে লুফে নেন বলটি। এবার মোসাদ্দেক ফেরান জিমি নিশামকে।সাইফউদ্দিন আর এক উইকেট নিলেও কোন উপকার হয় না দলের। ৪৭.১ বলে ২৪৮ রান সংগ্রহ করে নেয় নিউজিল্যান্ড। এতে বিশ্বকাপে দুই জয় পেলে কিউইরা।
বাংলাদেশের হয়ে সাকিব, মেহেদি হাসান, মোসাদ্দেক ও সাইফউদ্দিন ২ টি করে উইকেট নেন।
Leave a Reply