নিজস্ব প্রতিবেদক:
চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ (চমেক) হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রোগী দেখার নির্ধারিত সময় বিকাল চারটা থেকে ছয়টা। এসময় রোগী দেখতে আসা স্বজনদের জন্য ওয়ার্ডের গেইট খোলা রাখা হয়। নির্দিষ্ট সময়ের আগে-পরে কারো প্রবেশের নিয়ম নেই। কিন্তু হাসপাতালে কর্মরত আনসার সদস্যদের ২০টাকা ধরিয়ে দিলেই এ নিয়ম পাল্টে যায়। অনায়াসেই দেখা করা যায় রোগীর সঙ্গে। মাঝে-মধ্যে টাকার অংক বেড়ে শতক ছাড়িয়ে যায়।
চট্টগ্রামে বসবাসরত ব্যবসায়ী শহীদ জামান অভিযোগ করেন, রোগী দেখতে গেলে বিশ টাকা বকশিস না দিলে ওয়ার্ডে ঢুকতে দেন না কর্তব্যরত আনসার। চমেক হাসাপতালে কর্মরত আনসার রাসেলের দৈনিক আয় চার থেকে পাঁচ হাজার টাকা। এই টাকা রোগীদের আত্মীয়স্বজন থেকে অবৈধভাবে আদায় করেন রাসেল।
তিনি আরো অভিযোগ করেন, আনসার রাসেল নিজ নামে বিশেষ কার্ড বানিয়ে রোগীর আত্মীয়স্বজনের কাছ থেকে কার্ড প্রতি একশ টাকা হাতিয়ে নিচ্ছেন।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, চিকিৎসাধীন রোগী দেখার নির্ধারিত সময় বিকাল চারটা থেকে ছয়টা। এসময়ের মধ্যে রোগী দেখতে আসা স্বজনদের জন্য ওয়ার্ডের গেইট খোলা রাখা হয়। নির্দিষ্ট সময়ের আগে পরে চিকিসার স্বার্থে ওয়ার্ডের গেইট বন্ধ থাকে। শুধুমাত্র চিকিৎসাধীন রোগীর দেখাশুনা ও অষুধ আনা নেয়ার জন্য ওয়ার্ডে ভর্তি করা টিকিট অনুযায়ী একজন স্বজনের জন্য ২০ টাকা জামানতে একটি কার্ড ইস্যু করেন হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। রোগী ডিসচার্জ হওয়ার পর সে কার্ড জমা দিলে জামানতকৃত টাকা ফেরত দেয়া হয়।
শনিবার (১৫ জুন) সরজমিনে চমেক হাসপাতালে গিয়ে দেখা যায়, রোগীর সঙ্গে দেখা করার নির্দিষ্ট সময় আগে ও পরে দেখা করতে করিডোর ও গেইটের সামনে ভিড় করছেন শতশত স্বজন। অসময়ে আসাপাতালে রোগী দেখতে আসা স্বজনদে সঙ্গে বাকবিতণ্ডায় জড়িয়ে পড়ছেন কর্তব্যরত আনসার সদস্যরা। কোনো কোনো স্বজন ওয়ার্ডে ঢুকতে আনসার সদস্যদের হাতে ধরিয়ে দিচ্ছে ২০/৫০ টাকা।
চমেক হাসপাতালের ১৩ নাম্বার ওয়ার্ডে রোগী দেখতে আসা আরিফুল ইসলাম নামে এক ব্যক্তি জানান, আনসারের হাতে ২০ টাকা ধরিয়ে দিলে রোগী দেখতে কোনো সমস্যা হয় না। কিন্তু টাকা না দিলে ওয়ার্ডে ঢুকতে দেয়না।
ব্যবসায়ী শহীদ জামান রাসেল নামে যে আনসারে বিরুদ্ধে অভিযোগ করেছেন ছুটিতে থাকার কারণে তাকে খুঁজে পাওয়া যায়নি। তবে চমেকে কর্মরত ফাহিম নামে অপর এক আনসার সদস্য বলেন, অনেক রোগীর স্বজনরা খুশি হয়ে ১০/২০ টাকা চা খাওয়ার জন্য দেয়। কিন্তু কারো কাছ থেকে জোর করে টাকা আদায় করা হয় না।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে চমেক হাসপাতালের পরিচালক, বিগ্রেডিয়ার জেনারেল মোহসিন উদ্দিন আহমেদ বলেন, ‘অবৈধভাবে অর্থ আদায়ের কোনো অভিযোগ থাকলে প্রমাণসহ লিখিত জানাতে হবে। তাহলে আমরা ব্যবস্থা নিতে পারবো। হাসপাতালে বিশেষ কার্ড করার কোনো সুযোগ নেই। কেউ করে থাকলে সে খবর আমরা পেতাম। তবে কারো কাছে যদি বিশেষ সে কার্ড দেখা যায় তাহলে সে কার্ডের ছবি তুলে আমার কাছে দেন; আমি ব্যবস্থা নেব।’
Leave a Reply